ঘরোয়া থেকে বাণিজ্যিক পর্যায় – পেপে চাষের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা।

ঘরোয়া থেকে বাণিজ্যিক পর্যায় – পেপে চাষের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা।
পেপে চাষের সম্পূর্ণ গাইড | আধুনিক কৃষি

পেপে চাষের আধুনিক পদ্ধতি ও লাভজনক কৌশল

লেখক:এম আল-আমিন| আপডেট: অক্টোবর ২০২৫

কৃষি প্রযুক্তিবিদ ও লেখক। তিনি ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর লেখা কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন আর্টিকেল ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়।

পেঁপে গাছ
চিএ:পেঁপে গাছ।

ভূমিকা

বাংলাদেশে পেপে একটি জনপ্রিয় ফল। এটি সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং বাজারে সারা বছর চাহিদাসম্পন্ন। অল্প জায়গায় ও স্বল্প সময়ে বেশি ফলন দেয় বলে পেপে চাষ এখন অনেক কৃষকের পছন্দের ফসল। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে খুব সহজেই বাণিজ্যিকভাবে পেপে চাষ করে ভালো আয় করা সম্ভব।

উপযুক্ত মাটি ও জলবায়ু

পেপে গাছ সাধারণত হালকা দোঁআশ মাটিতে ভালো জন্মে। মাটির pH মান ৬.০ থেকে ৬.৫ হলে সবচেয়ে ভালো ফলন পাওয়া যায়। জমিতে পানি জমে থাকলে গাছ মারা যায়, তাই উঁচু বা মাঝারি জমি নির্বাচন করা জরুরি।

  • বার্ষিক গড় তাপমাত্রা: ২৫°–৩০°C
  • বৃষ্টিপাত: মাঝারি
  • সূর্যালোক: প্রতিদিন ৬–৮ ঘণ্টা

জাত নির্বাচন

বাংলাদেশে বর্তমানে বেশ কয়েকটি উন্নত মানের পেপে জাত পাওয়া যায়। নিচে কিছু জনপ্রিয় জাত উল্লেখ করা হলো:

  • রেড লেডি: দ্রুত ফল দেয় ও বাজারে জনপ্রিয়।
  • হল্যান্ড পেপে: আকারে বড় ও মিষ্টি।
  • বিএআরআই পেপে-১ ও ২: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
পেঁপে চারা
চিএ:পেঁপে গাছের চারা।

বীজ বপন ও চারা তৈরি

সুস্থ ও পরিপক্ব ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ ১ দিন ছায়ায় শুকিয়ে বীজতলায় বপন করা হয়। ২৫–৩০ দিনের মধ্যে চারা রোপণের উপযোগী হয়ে যায়। প্রতি গর্তে ২–৩টি করে চারা লাগানো যেতে পারে, পরবর্তীতে একটি ভালো চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হয়।

রোপণের দূরত্ব ও সার ব্যবস্থাপনা

পেপে গাছের মধ্যে দূরত্ব রাখতে হয় সাধারণত ৬ ফুট × ৬ ফুট। সার ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করলে ফলন অনেক বৃদ্ধি পায়।

  • গর্তে প্রতি গাছের জন্য ১০–১৫ কেজি জৈব সার মেশাতে হয়।
  • প্রতি ৩ মাস অন্তর ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সারের নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রয়োগ করতে হয়।
  • সেচ ও আগাছা দমন নিয়মিত করতে হবে।

রোগ ও পোকামাকড় প্রতিকার

পেপে গাছে ভাইরাস, ছত্রাক ও পোকামাকড় আক্রমণ দেখা দিতে পারে।

  • পাতা মোজাইক ভাইরাস: আক্রান্ত গাছ তুলে ফেলা উচিত।
  • গামোসিস রোগ: ট্রাইকোডার্মা বা কপার অক্সিক্লোরাইড ছিটাতে হবে।
  • মাকড় ও ফলমাছি: নিমপাতার রস বা বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল ব্যবহার করা ভালো।

ফল সংগ্রহ

রোপণের ৭–৮ মাস পর থেকেই ফল সংগ্রহ শুরু করা যায়। ফল হালকা হলুদ রঙ ধারণ করলে তোলার উপযুক্ত হয়। পেপে ফল তোলার সময় সতর্ক থাকতে হবে যাতে গাছের শাখা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

ব্যবসায়িক লাভ ও বাজারজাতকরণ

এক একর জমিতে প্রায় ৯০০–১০০০টি গাছ লাগানো যায়। প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ৩০–৪০টি ফল পাওয়া যায়। পাইকারি দরে প্রতি কেজি ২৫–৩০ টাকা হিসেবে বছরে এক একর জমি থেকে ৫–৬ লাখ টাকার মতো বিক্রি করা সম্ভব।

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

ড্রিপ সেচ, বায়ো সার, মালচিং, এবং ফার্টিগেশন ব্যবহারে ফলন ৩০–৪০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এছাড়া জৈব(বিশেষ করে গোবর) সার ব্যবহার করলে ফলের গুণমানও বৃদ্ধি পায়।

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১: পেপে চাষে কত দিনে ফল পাওয়া যায়?
উত্তর: সাধারণত রোপণের ৭–৮ মাস পর ফল পাওয়া শুরু হয়।

প্রশ্ন ২: কোন সময় পেপে চাষের জন্য উপযুক্ত?
উত্তর: মার্চ–এপ্রিল অথবা জুলাই–আগস্ট মাসে রোপণ করলে ভালো ফলন হয়।

প্রশ্ন ৩: এক একর জমিতে কত লাভ করা যায়?
উত্তর: সঠিক যত্ন নিলে বছরে ৩–৫ লাখ টাকার মতো নিট লাভ করা যায়।

প্রশ্ন ৪: পেপে চাষে কী ধরনের সার সবচেয়ে ভালো?
উত্তর: গোবর সার, কম্পোস্ট, ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সঠিক অনুপাতে ব্যবহার করা উচিত।

গ্রামীন অর্থনীতিতে পেপে চাষের গুরুত্ব অপরিসীম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কৃষক🔆কৃষি আপনাকে স্বাগতম
আসসালামু আলাইকুম ! কিভাবে আপনাকে সহযোগিতা করতে পারি?
Type here...